ড. জাওদাত সামি। গাজার আল-শিফা হাসপাতাল থেকে পালিয়ে একটানা হেঁটেছেন ১৬ কিলোমিটার। দেইর আল-বালাহ শহরে পৌঁছে যখন স্থানীয় আল-আকসা শহীদ হাসপাতালের সামনে পৌঁছালেন তখন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না ড. জাওদাত। গাজার ভয়ংকর দিনগুলো পেছনে রেখে কোনো একদিন পালাতে পারবেন- এটাই ছিল তার কল্পনার বাইরে।
আল-শিফা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ২৫ দিন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাটিয়েছেন জাওদাত। ঢাল, তলোয়ার ছাড়া অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছেন আহতদের বাঁচিয়ে তোলার জন্য। আল-শিফা হাসপাতালের অবস্থা এখন করুণই বলা চলে। ওষুধ নেই,
পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই, নেই অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থাও। গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন চলে মোমবাতির আলোয়। একটুখানি সেবা এবং উপরওয়ালার কাছে দোয়া করা ছাড়া ইসরায়েলের বোমার আঘাতে গুরুতর আহতদের বাঁচানোর আর কোনো উপায় নেই হাসপাতালটিতে।
হাসপাতালে যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকা আহতদের কথা বলতে গিয়ে ঝরঝর করে কেঁদে দেন জাওদাত সামি। ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে তিনি বলেন, আমরা আহতদের সাহায্য করতে পারিনি। তারা মারা যাচ্ছিল! আমরা তাদের বাঁচাতে কিছুই করতে পারিনি।
চেয়ে চেয়ে তাদের মরতে দেখা ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার ছিল না। জাওদাত জানান, হাসপাতালের উঠানে শতাধিক লাশ পড়ে আছে। ইসরায়েলি স্নাইপারের ভয়ে তাদের দাফন করাও সম্ভব হয়নি।
গেল শুক্রবার থেকেই আল-শিফা হাসপাতাল অবরোধ করে রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজার প্রাচীনতম এবং বৃহত্তম এই হাসপাতালের প্রাঙ্গণে কাউকে প্রবেশ কিংবা বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। কাউকে নড়তে দেখলেই দূর থেকে গুলি করছে ইসরায়েলি স্নাইপাররা।
এই অবস্থায় হাসপাতাল থেকে বাইরে যাওয়ার কথা কল্পনাও করা যায় না। নিজের মা এবং প্রাণপ্রিয় স্ত্রীকে আর কখনো দেখতে পারবেন কি না, এটি ভেবে আবারও আবারও কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন ড. জাওদাত। এক সময় হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার মনস্থির করলেন তিনি।
সোমবার সকালে ছদ্মবেশ নিয়ে একদল বাস্তুচ্যুত লোকের সঙ্গে হাসপাতাল ত্যাগের পরিকল্পনা করলেন জাওদাত। স্নাইপারদের এড়াতে লোকগুলোর পেছন পেছন হাঁটা শুরু করলেন তিনি। এর মধ্যেই তাদের লক্ষ্য করে তিন তিনবার গুলি করে ইসরায়েলি স্নাইপাররা।
হাসপাতালের আঙিনায় পড়ে থাকা মৃতদেহ, বিভিন্ন ধ্বংস্তূপ এবং রাস্তার মোড়ে মোড়ে আশ্রয় নিয়ে আল শিফা থেকে শেষ পর্যন্ত বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন জাওদাত সামি। এখন দেইর আল-বালাহ শহরে পৌঁছলেও নিজের পরিবারের কাছে কীভাবে পৌঁছাবেন, তা জানেন না এই চিকিৎসক।